জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে চতুর্থ দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন তার আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান। এ সময় এ মামলা থেকে বেগম খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে আবেদন করেন তিনি। তিনি আদালতকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধ অভিযোগ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাই এ মামলা থেকে তার খালাস চাই।

জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে ২৭ ডিসেম্বর বুধবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি আদালতে হাজির হওয়ার পর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় চতুর্থ দিনের মতো তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন আইনজীবী।

যুক্তি উপস্থাপনে আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কুয়েতের টাকা রাখার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, এ অভিযোগ প্রমাণশূন্য। শুধু তাই নয়, তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে লিখিত ও মৌখিক কোনো প্রমাণও নেই।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুয়েত থেকে আসা টাকা আত্মসাৎ করেছেন, এর কোনো প্রমাণ নেই। মামলার কোনো সাক্ষীও এ বিষয়ে কিছু বলেননি। মামলার এফআইআরে আছে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এটিও ঠিক নয়। এফআইআরের কথা যে বেদের মতো বিশ্বাস করতে হবে তাও ঠিক নয়।

বেগম খালেদা জিয়া
আব্দুর রেজাক খান তার যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলে খালেদা জিয়ার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। তার যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন আদালত।

দুপুর আড়াইটার দিকে বেগম খালেদা জিয়া আদালত থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। গতকাল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান। ওইদিন তার যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আজ বুধবার ধার্য করেন আদালত।

১৯ ডিসেম্বর এ মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ১৯ ডিসেম্বর তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে খালেদার সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করেন। ২০ ডিসেম্বর খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান।

অপরদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যুক্তি উপস্থাপনের জন্যও একই দিন ধার্য করেন আদালত। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে বেগম খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশীদ বেগম খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর একটি মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।