নোয়াখালী : নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ীতে ছেলে হত্যার বিচার দাবীতে পিতার পোষ্টারিংয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ‘আকুল আবেদন ও অভিযোগ’ শিরোনামে পিতা আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী একমাত্র ছেলে শাহাদাতের হত্যার বিচার চেয়ে বিষন্ন মনে আঠা আর ছোট কাগজের এই পোষ্টার দেওয়ালে দেওয়ালে সাটিয়ে যাচ্ছেন।

পোষ্টার হাতে নিয়ে আব্দুল মান্নান জানান, উপজেলার ১ নং জয়াগ ইউনিয়নের আমকি গ্রামের ইব্রাহিম পাটোয়ারী বাড়ীর সফিক উল্যা হঠাৎ করেই আমার ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে। ফ্রি ভিসায় লিবিয়ায় রাজমিস্ত্রির কাজে শাহাদাতকে প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা বেতন দেওয়া হবে। এ ধরনের কথায় আমাকে প্রলুব্ধ করায় আমি দার-দেনা করে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বার ৫০ হাজার এবং ৩য় বার আরো ৩০ হাজার টাকা সফিক উল্যাকে প্রদান করি। এরপর সফিক উল্যার মেয়ের জামাই শহিদুল এর সাথে শাহাদাত যায় বিমানবন্দরে সেখানে ছেলেকে বিদায় দিয়ে আসি। এর পাঁচ দিন পর ছেলের সাথে ফোনে কথা বললে ছেলে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে-‘সুদানে চার দিন চার রাত মাটির নিচে একটি ঘরে কোন খাওয়া না দিয়ে আমাকে রাখা হয়েছে, দ্রুত আমার জন্য ৫০ হাজার টাকা পাঠান নয়তো রাসেল আর শহিদুল বলেছে- ‘আমাকে জংলীদের কাছে ৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিবে’।

ছেলের কন্ঠে এমন কথা শুনে আমি রাসেলের সাথে যোগাযোগ করি সেও আমাকে ১ লক্ষ টাকা পাঠাতে বলে। নিরূপায় হয়ে কর্জ্য করে ১ লক্ষ টাকা পাঠালে ছেলেকে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। এর পর শাহাদাতের কোন খবর না পেয়ে রাসেলের বাবা সফিক উল্যার কাছে আকুতি জানাতে থাকি। সফিক উল্যার

বাড়িতে খেতের মধ্যে ৪০ দিন আমাকে কাজ করায় কিন্তু কোন টাকা পয়সা দেয়নি। আমার স্ত্রীও তার বাড়িতে কাজের মহিলার মতো কাজ করেছে শুধু ছেলে বিদেশে ভালো থাকবে এই আশায়। স্বামী-স্ত্রী দুজন দাস-দাসীর মতোই গৃহকর্মে শ্রম দিয়েছি। এরা অসহায় গরীর মানুষকে জিম্মি করে দাস ব্যবসা করে আরো অনেককেই এভাবে শেষ করে দিয়েছে।

দীর্ঘ দুই মাস পর যোগাযোগ হলে ছেলে জানায়, ‘পাঁচদিন জেল রেখেছে, আমি প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা করে আয় করেছি। মোট ছয় মাসের বেতন তের লাখ টাকা রাসেলের কাছে এছাড়াও বর্ধিত কাজের দেড় লখ টাকাও রাসেলের কাছে রয়েছে’। এর কয়েকদির পরই রাত দুইটা রাসেল আমাকে ফোন করে জানায়, ‘শাহাদাত ইতালীর সিমান্ত এলাকায় বোমা হামলায় নিহত হয়েছে’। এ কথা বলেই সাংবাদিকদের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় শাহাদাতের বাবা

পাটোয়ারী।

এর পর শাহাদাতের মা শাহিনুর বেগম বলেন, ‘রাসেল নিজ থেকেই বলে, ‘আপনারা আবার মনে কইরেন না আমি শাহাদাতকে মেরে তার কিডনী আমি লাগিয়েছি’। শাহতাদাত বেনগাজিতে কাজ করতো সেখান থেকে সীমান্ত অনেক দূরে কিভাবে এক ঘন্টার মধ্যে শাহাদাতের লাশ হাসপাতালে তাদের হেফাজতে আসলো? এরপর ডুকরে কেঁদে শাহাদাতের মা বলেন, ‘আমার ছেলের লাশ চাই। সফিক, রাসেল, তার বোন জামাই শহিদুল এর বিচার চাই। আমার আরো দুইটা মেয়ে এককা ছেলে আছে তাদের নিয়ে আমি কোথায় যাবো। সাড়ে চার লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে। ঘরের ভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। সমাজের বিবেকবান মানুষের কাছে আমি সহায়তা চাই।